.
একবার বিখ্যাত তাবেঈ হাসান বাসরি (রাহ.) বসা ছিলেন। একজন লোক এসে বললেন, জনাব! আমি জীবনে অনেক গুনাহ করেছি, কীভাবে আমার জীবনের সব গুনাহ মাফ করাতে পারবো?
তিনি বললেন, "যাও এবং ইস্তিগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) করো।"
.
একজন লোক এসে বলল, অনেকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না, এমন কোন আমল বলে দিন যা করলে আল্লাহ বৃষ্টি দিবেন।
তিনি বললেন, "যাও এবং ইস্তিফগার করো।"
.
একজন লোক এসে বলল, আমি ঋণে জর্জরিত। আমি কাজ করছি, আপনি আল্লাহর কাছে দুয়া করুন যেন তিনি আমাকে সম্পদ দান করেন এবং আমি ঋণমুক্ত হতে পারি।
তিনি বললেন, "যাও এবং ইস্তিগফার করো।"
.
একজন লোক এসে বলল, আমি চাই আল্লাহ যেন আমাকে সন্তান দান করেন। আপনি দুয়া করুন।
তিনি বললেন, "যাও এবং ইস্তিগফার করো।"
.
একজন লোক এসে বলল আমার একটি বাগান আছে। আপনি দুয়া করুন যেন আমার বাগানে আল্লাহ ফল বেশি করে দেন।
তিনি বললেন, "যাও এবং ইস্তিগফার করো।"
.
একজন লোক এসে বলল, আমার ঘরে যদি পানি থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো।
তিনি বললেন, "যাও এবং ইস্তিগফার করো।"
.
হাসান বাসরি (রাহ.)-এর এক ছাত্র পাশেই বসা ছিলেন। তিনি এসব দেখে চিন্তা করতে লাগলেন, “কেন সবাইকেই হযরত বিভিন্ন সমস্যার একই সমাধান বলছেন?!”।
ছাত্রটি হাসান বাসরিকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন আপনি সকল সমস্যার একটাই সমাধান দিচ্ছেন?
হাসান বাসরি (রাহ.) মুচকি হেসে বললেন, কেন বেটা! তুমি কি আল্লাহ তাআলার এই বাণী পড়নি?-
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا
অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا
তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন,
وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا
তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। [সূরা নূহ: ১০-১২]
.
মুসলিম আন্দালুসের (স্পেনের) সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসির ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর তাফসির "আল জামি' লি-আহকামিল কুরআন"-এ উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।
.
হাফিয ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহ.) বলেন,
"ইস্তিগফার (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) হলো সবচেয়ে বড় নেককাজগুলোর অন্যতম; এর ব্যাপ্তি এতো বেশি যে, যখনই কেউ নিজের ইবাদাত, কথা ও কাজে ত্রুটি খুঁজে পায় অথবা তার রিযিকে স্বল্পতা পায় কিংবা তার হৃদয় থকে অশান্ত, তার উচিত তৎক্ষণাত ইস্তিগফারে লেগে যাওয়া।"
[মাজমূ'উ ফাতাওয়া: ১১/৬৯৮]
'
ইস্তিগফার এভাবে করতে পারেন--
* শুধু أستغفر الله "আসতাগফিরুল্লাহ" (বেশি পরিমাণে বলতে থাকা)
* أستغفر الله الذي لا إلاه إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه
আসতাগফিরুল্লা-হাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।
* أستغفر الله وأتوب إليه
আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
* رب اغفر لي وتب علي إنك أنت التواب الرحيم
রাব্বিগ ফিরলি ওয়া তুব 'আলায়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাও-ওয়াবুর রাহীম।
.
[আরবি টেক্সট এর সাথে মিলিয়ে উচ্চারণ করুন, না হয় শুদ্ধ উচ্চারণ করতে পারবেন না।]
.
সর্বোত্তম ইসতিগফার হলো, সাইয়িদুল ইসতিগফার। সেটি সকাল এবং রাতে অর্থ বুঝে মনযোগসহ পড়লে এবং সেদিন রাতে বা দিনে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ্ তাকে জান্নাত দিবেন। [সহিহ বুখারি: ৬৩০৬]
আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের ইসতিগফারময় জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার:
((اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ )
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।
সূত্র : বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।
- সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment